ই-পেপার বাংলা কনভার্টার রোববার ১৯ মে ২০২৪ ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ই-পেপার রোববার ১৯ মে ২০২৪
ব্রেকিং নিউজ: ফেডারেশন কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে মোহামেডানকে হারিয়ে সেমিতে সাইফ      এ মাসেই করোনার টিকা দেশে আসবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী      গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৩ জনের মৃত্যু; শনাক্ত ৬৮৪      হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি      যুক্তরাজ্য থেকে ফেরা আরো ৫ জন কোয়ারেন্টিনে       রাজশাহীতে মদপানে ৩ জনের মৃত্যু       বাসে ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা: বাস চালক গ্রেপ্তার       বিশ্ব জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ দিবস আজ      প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে নির্বাচন আজ      কবি আহসান হাবীবের জন্মদিন আজ      মহাখালীতে ছুরিকাঘাতে কিশোর নিহত      নারীনেত্রী আয়েশা খানম আর নেই      নতুন বছরের প্রথমদিনে কমেছে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত      




মুজিববর্ষে আমাদের প্রত্যাশা
Published : Tuesday, 24 March, 2020 at 12:44 PM
হাসান আল বান্না : লিখাটি যখন লিখছি তখন আমি দেশের বাইরে অবস্থান করছি, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে দেশ ও জাতির প্রত্যাশা আকাশচুম্বী, তবে এ প্রত্যাশা কেবল মুজিব বর্ষের জন্য নয়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ, অতঃপর দীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গড়ে ওঠা আজকের বাংলাদেশ উন্নত দেশে রূপান্তরিত হোক এ চায় দেশবাসী, সেকারণে পরবর্তী বছরগুলোতেও যে উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকে এমনটাই চায় সাধারণ মানুষ। স্বাধীনতা অর্জনের পর প্রায় অর্ধশত বছরের দ্বারপ্রান্তে আজকের বাংলাদেশ। অনেক দীর্ঘ সময় পথ অতিক্রম করা হয়েছে। একটি সভ্যতা ও জাতির উন্নয়নে এই সময় যথেষ্ট হওয়ার কথা ছিল। স্বভাবতই এ দেশের জনগণের প্রত্যাশা বাংলাদেশ একটি সাম্য ও ইনসাফ ভিত্তিক আধুনিক গণতান্ত্রিক ও কল্যাণ রাষ্ট্র হবে। সকল নাগরিকের সমঅধিকার ও সমমর্যাদা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সাংবিধানিক সকল অধিকার পাবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে এখন পর্যন্ত সেটি অর্জিত হয়নি, সেই লক্ষ্য অর্জনে সংগ্রাম এখনো চলছে। অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে হাঁটছি আমরা। শুধু মুখের বুলিতেই আওড়াচ্ছি আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্র। যে মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল, দেশ স্বাধীন হয়েছিল কিন্তু সেই স্বাধীন দেশে মত প্রকাশের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবরাররা আজও রক্ত ঝরাচ্ছে। ছে। আজও দারিদ্র্যতা আর চিকিৎসাহীনতায় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকতে হচ্ছে দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক মানুষকে। 
এরপরও বাংলাদেশের মানুষ স্বপ্নচারী। কাক্সিক্ষত বাংলাদেশের প্রত্যাশী। সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে মুজিববর্ষ ঘোষণা করেছে। এই মুজিব বর্ষ শুধুমাত্র কেবলমাত্র অনুষ্ঠান ও দলীয় বন্দনায় সীমাবদ্ধ থাকুক দেশের মানুষ তা চায়না। এই ঐতিহাসিক মুজিব বর্ষে সরকার, প্রশাসন, নাগরিক সেবা, মানবাধিকার, আইনের শাসনের উন্নতি ঘটুক সেটাই মুখ্য। কসমেটিক উন্নয়নে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয় না অথবা কোন সভ্যতারও পরিবর্তন হয় না। মানুষ চায়, এই বর্ষে সব মানুষের মধ্যে সাম্য ফিরে আসুক। সরকার সব শ্রেনী পেশার মানুষের মৌলিক অধিকার নিয়ে কাজ করুক। দারিদ্রতা শূন্যের কোঠায় নেমে আসুক। 
দুর্নীতি ও উন্নয়নের একটি উদাহরণ পেশ করলে পুরো বিষয়টি ধারনা পাওয়া যাবে। যেমন ধরুন : একজন বাবা তার তিন ছেলেকে ডেকে ১০০ করে টাকা দিয়ে বললেন,  প্রত্যেকেই ১০০ করে টাকা থেকে এমন জিনিস কিনে আনবে যা পুরো ঘর ভরে যাবে। প্রথম সন্তান ১০০ টাকা দিয়ে খর কিনে আনলেন কিন্তু তা দিয়ে ঘর ভরেনি। দ্বিতীয় জন ১০০ টাকা দিয়ে ঘাস কিনলেন কিন্তু তাতেও ঘর ভরেনি। এরপর তৃতীয় জন ১০০ টাকা থেকে ৫ টাকা দিয়ে একটা মোমবাতি কিনে আনলেন। অতঃপর তা জ্বালালে পুরো ঘর ভর্তি আলো দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো। এতে বাবা তার খুবই প্রশংসা করলেন। 
এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাকি ৯৫ টাকা কোথায় গেলো? সারাদেশ উন্নয়ন আর ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে ৫ টাকায়, তো বাকি ৯৫ টাকা যায় কোথায়? উত্তর : বালিশ, পর্দা ও নারেকেল, কলা গাছে কেলেঙ্কারীর ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর মানুষের মধ্যে এক ধরণের আস্থাহীনতা চলে এসেছে। মুজিববর্ষে প্রত্যাশা সরকার জনগণের আস্থায় ফিরে আসুক। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে আরো ভূমিকা রাখুক। 
মুজিব বর্ষে মানুষের হৃদয়ের আকাঙ্খা হচ্ছে সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ দুর্নীতি মুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রে পরিণত হবে। সংক্ষেপে মুজিব বর্ষে মানুষের মূল প্রত্যাশা সমূহ আলোকপাত করছি : ক. প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার : মুজিব বর্ষের এদেশের সবশ্রেনী পেশার মানুষের মূল চাহিদা হচ্ছে শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভোটাধিকার প্রয়োগের নিশ্চিয়তা লাভ করা। আগেই বলেছিলাম, আইয়ুব খান ব্যাপক উন্নয়ন করেছিল কিন্তু গণতন্ত্রের গলটিপে ধরতে মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তন করে, ফলে আইয়ুব খানের উন্নয়ন জনগণের নিকট প্রত্যাখাত হয়। স্বাধীনতার আন্দোলনের দাবানল জ্বলে ওঠে। ফলে উন্নয়নের চেয়ে একটি জাতির টেকসই স্বাধীনতার জন্য প্রথম প্রয়োজন গণতন্ত্র ও অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভোটাধিকার। খ. জবাবদিহি মূলক প্রশাসন : একটি কল্যাণ রাষ্ট্র নির্ভর করে সে দেশের প্রশাসন কতটা জবাবদিহি মূলক তার উপর। বাংলাদেশের প্রশাসন এখনও স্বচ্ছ ও জবাবদিহি মূলক হয়নি। ফলে দুর্নীতির মহোৎসবে স্বাধীনতার সুফল বালিচাপা পড়ে যায়। তার চেয়ে বড় কথা অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহিতার অভাবের দুর্নীতি গাণিতিক ও জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায়। 
যেমন ধরুন গত কদিন পূর্বে একটি প্রস্তাবিত স্কুলে একটা নারিকেল গাছ ৬১ লাখ টাকা আর একটি কলাগাছের দাম ৬ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এরও পূর্বে ফরিদপুর মেডিকেলে জানালার পর্দা কেনা হয় ৩৭ লাখ টাকা আর রূপপুরে একটি বালিশের দাম ৬ হাজার টাকা। এছাড়া বড় মেগা প্রজেক্ট সমূহের প্রকল্প ব্যয় প্রতি বছর একাধিকবার করে বৃদ্ধি পায়। এসবই সম্ভব হচ্ছে শুধুমাত্র অস্বচ্ছ ও জবাবদিহি বিহীন প্রশাসনিক কাঠামোর কারণে। বঙ্গবন্ধু তাই আফসোস করে বলতেন - আমার সামনে চোর, ডানে চোর, বায়ে চোর, পিছনে চোর। সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালি আর আট কোটি কম্বল আমার কম্বল গেল কোথায়? গত পঞ্চাশ বছরে একটি জাতির প্রশাসন দুর্নীতি মুক্ত হয়নি। এখানে সিস্টেমগত কিছু বিষয়ও আছে যেমন জনগণের নিকট জবাবদিহি করবে প্রশাসন? অথচ বাংলাদেশই পৃথিবীর একমাত্র অদ্ভুত রাষ্ট্র যে জনগণ তার প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীকে জ্বী হুজুর ও স্যার বলে সম্বোধন করে। 
গ. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা : মুজিব বর্ষের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। অথচ এই মুজিব বর্ষেই গেল কদিন পূর্বে পিরোজপুরে আইনের শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এমপি আওয়ালের জামিন বাতিলকারী বিচারককে শাস্তি স্বরূপ স্ট্যান্ড রিলিজ দেওয়া হয়। যা বাংলাদেশের বিচার বিভাগের নজিরবিহীন ঘটনা। আরো বেদনার খবর হচ্ছে, মাদক ও ক্যাসিনো কারবারি জি কে শামীমের জামিনের খবর জানতেন না স্বয়ং এটর্নি জেনারেল নিজেও। এই  যদি হয় আইনের শাসনের নমুনা তবে সাধারণ মানুষের আর যাওয়ার জায়গা কোথায়? কোর্টের পাশাপাশি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। যে ফোর্সটি মানুষের নিরাপত্তার জন্য গঠিত। সেই পুলিশের ডিআইজি মিজান, নুসরাত হত্যার সময়ের ফেনী সোনাগাজী থানার ওসি, যাত্রাবাড়ী থানার ওসির বিরুদ্ধে ধর্ষণ অভিযোগ সবমিলিয়ে কোন কোন পুলিশ নিজেও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বাধাগ্রস্ত করে নিজেরাই বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা হওয়ার আগে অনার্স মাস্টার্স করে বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ও লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে যখন বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করে তখন স্বভাবতই তার কাছ থেকে নিরপেক্ষ সার্ভিস কামনা করা বেমানান। তাই আমি বলেছিলাম, এইচএসসি পাশ করেই পুলিশে যোগদান করবে। সেখানে পুলিশ লাইনেই তার ট্রেনিং ও পরবর্তী গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করবে। যেখানে ক্রিমিনলোজি, আইন, মনোবিজ্ঞান, পাবলিক সার্ভিস ও পুলিশিং কার্যক্রমের উপর পড়াশোনা করবে। পোস্ট গ্রেজুয়েট হওয়ার পর এবং দক্ষ ট্রেনিং সম্পন্ন হওয়ার পর তাকে থানায় দায়িত্ব পালন করানো হবে। বাংলাদেশ পুলিশের নৈতিক ও দক্ষতা অর্জনে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে ঊধ্বতনদের। ঘ. বিবিধ : মাদক, অবৈধ পাপিয়াদের প্রজনন, অবাধ যৌনাচার বৃত্তি, বিকৃত সমকামী যৌনাচার ও ধর্ষণের ঘটনার জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারলে একিটি ভারসম্যপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। মুজিববর্ষেই এ ধারা অব্যাহত থাকুক। পাশাপাশি অর্থনৈতিক সক্ষমতা, শিক্ষার উন্নয়ন, পারিবারিক মূল্যবোধ, ধর্ম ও নৈতিকতা, রাষ্ট্রের সাদিচ্ছা, দেশপ্রেম ও সচেতনতা, জবাবদিহিমূলক সরকার, স্বচ্ছ প্রশাসন, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোধ, মাদক নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এসব এমনি এমনি হয় না! প্রয়োজন রাজনৈতিক সাদিচ্ছা আর সৎ, যোগ্য এবং দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব। 
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক।







সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স: ৪১০৫২২৪৫, ৪১০৫২২৪৬, ০১৭৭৫-৩৭১১৬৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন: ৪১০৫২২৫৮
ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
পিএবিএক্স: ৪১০৫২২৪৫, ৪১০৫২২৪৬, ০১৭৭৫-৩৭১১৬৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন: ৪১০৫২২৫৮
ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected]