Published : Tuesday, 1 September, 2020 at 8:59 PM, Update: 01.09.2020 10:29:10 PM
হাসান আল বান্না : কোন এক শীতের সকালে কলকাতার পার্ক সার্কাস ময়দানে হাটছি। ময়দান গেইট সংলগ্ন দেখতে পেলাম একটি টেবিলে বিশাল আকৃতির ছবির উপর পূজা চলছে। কাছে গিয়ে দেখি ছবিটি প্রণব মুখার্জির। সাথে ছিলেন কলকাতার এক সাংবাদিক বন্ধু। বিকেলে গুজরাট যাওয়ার ফ্লাইট। তাই সকালে জগিং, বন্ধুর সাথে প্রয়োজনীয় আলাপ সেরে নিলাম। কথা প্রসংগে আলোচনায় প্রণব মুখার্জির কর্মময় জীবনের নানাবিধ দিক উঠে আসে। কলকাতাবাসী মনে করেন, প্রণব মুখার্জি বাঙালী জাতীয়তাবাদের মূর্ত প্রতীক। বাংলার সংস্কৃতি মননে ও চেতনায় ধারণ করে ভারতীয় জাতীয় রাজনীতি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। ভারতের জাতীয় বর্নাঢ্য রাজনীতিবিদের মধ্যেও তিনি অন্যতম। ধর্মে হিন্দি হলেও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে তিনি আপোষহীন। সবমিলিয়ে পশ্চিম বঙ্গের মানুষের নিকট তিনি অনেকটা বাংলার মাহাত্ম্য গান্ধী। আর সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বিদগ্ধ রাজনীতিক হিসেবে পুরো ভারতে তার মর্যাদা সার্বজনীন। এখানে কেন সার্বজনীন তা নীচে ব্যাখায় লিখবো। এই হচ্ছে আমার দৃষ্টিতে মোটামুটি ভারত বর্ষে প্রণব মুখার্জির সংক্ষিপ্ত পরিচয়।
ভারতীয় রাজনীতিতে এই উজ্বল নক্ষত্র সম্পর্কে যতটুকু গবেষণা করেছি তারমধ্যে আমার নিকট একটি বিষয় প্রতীয়মান হয়েছে, ইন্দিরা গান্ধীর আহ্বানে প্রণব মুখার্জি কংগ্রেসের রাজনীতি করলেও তিনি অনেকটা বর্তমান ক্ষমতাশীন ভারতীয় বিজেপি পার্টির সভাপতি অমিত শাহের স্টাইলে রাজনীতিক। বাঙ্গালী হিসেবে প্রণব মুখার্জি বাঙালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী হলেও অনেকটা তিনি হিন্দু জাতীয়তাবাদের ভাবধারাও মারাত্মকভাবে লালন করতেন। ফলে কংগ্রেসের রাজনীতি করলেও তিনি পরিপূর্ণ সেক্যুলার ছিলেন না মর্মেই আমার গবেষণায় দারুণভাবে উঠে এসেছে। যার কারণে তিনি কংগ্রেস এবং বিজেপি সহ কট্টর হিন্দুত্ব বাদী সংগঠন আরএসএস সহ সবার কাছেই সম্মান পেয়েছেন। যার দরুন কংগ্রেস রাজনীতিক হয়েও তিনি সার্বজনী। যেটা ভারতীয় ইতিহাসে কোন কংগ্রেস রাজনীতিক এমন সার্বজনীন ছিলেন না। সার্বজনীন বলতে নিজ দল কংগ্রেস এবং প্রতিযোগী দল বিজেপির নিকটও সমান আস্থাভাজন তিনি।
এবার আসি একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে। প্রণব মুখার্জি পশ্চিম বঙ্গের মানুষ হলেও বাংলাদেশও আছে তার চিন্তার বিশাল অংশজুড়ে। অবিভক্ত ভারতে জন্ম নেওয়ার পর স্কুল জীবনের কোন একটা বছর হয়তবা ঢাকায় কেটেছে। আবার বিয়ে করেছেন তিনি বাংলাদেশের নড়াইল জেলায়। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিক অনেকের সাথে রয়েছে তার বিশেষ সখ্যতা, পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়েও তার আগ্রহের কোন কমতি ছিলনা। বলা হয়ে থাকে ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী মইন ইউ আহম্মেদকে ভারত সফরে নিয়ে বিশেষ ঘোড়া উপহার প্রদান করে তার আগ্রহের অফিসিয়ালি ভূমিকা শুরু হয়। পরবর্তী বাংলাদেশ নির্বাচন এবং আজকের বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশের উপর ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে তার। কেউ কেউ বলেন, আজকের আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনাকে তিনি সেই ভাবে দোয়া দিয়ে আগলে রাখছেন যেমনটা ইন্দিরা গান্ধীও একই আর্শিবাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে আগলে রেখেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধীর সে সময় আর্শিবাদে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়। আর এখন গত এক যুগ ধরে প্রণব দার দোয়া আর্শিবাদের ফসলে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ ক্ষমতায় থাকার পর সহজ হয়েছে। বলতে পারেন, ৭১ সাল ও ৭১ পরবর্তী আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর যেমন সুহৃদ মহান বন্ধু ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী ঠিক এই সময় আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার এখনকার সুহৃদ অকৃত্রিম বন্ধু হচ্ছেন প্রণব মুখার্জি। আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা কখনোই প্রণব মুখার্জির ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। প্রণব মুখার্জির মৃত্যু হওয়ায় আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার এমন পরম বন্ধু বা অভিভাবক পরবর্তীতে কে হবেন সেটা হয়তোবা ভবিষ্যৎ বলে দিবে!
এই মূহুর্তে ভারতীয় অর্থনীতি ইতিহাসের সেরা নিন্ম সূচকে। ভারতে করোনা পরিস্থিতি ক্রমশই ভয়াবহ। ওদিকে চীন কর্তৃক ভারতে হামলার তোড়জোড়। প্রতিবেশী বাকি কোন দেশের সাথেই ভারতের সম্পর্ক ভালো নেই কেবল বাংলাদেশ ছাড়া। ঠিক এই মহূর্তে প্রণব মুখার্জির চলে যাওয়া বড় ধরেন শূন্যতা তৈরি হলো।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট