ই-পেপার বাংলা কনভার্টার শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
ই-পেপার শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪
ব্রেকিং নিউজ: ফেডারেশন কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে মোহামেডানকে হারিয়ে সেমিতে সাইফ      এ মাসেই করোনার টিকা দেশে আসবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী      গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৩ জনের মৃত্যু; শনাক্ত ৬৮৪      হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি      যুক্তরাজ্য থেকে ফেরা আরো ৫ জন কোয়ারেন্টিনে       রাজশাহীতে মদপানে ৩ জনের মৃত্যু       বাসে ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা: বাস চালক গ্রেপ্তার       বিশ্ব জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ দিবস আজ      প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে নির্বাচন আজ      কবি আহসান হাবীবের জন্মদিন আজ      মহাখালীতে ছুরিকাঘাতে কিশোর নিহত      নারীনেত্রী আয়েশা খানম আর নেই      নতুন বছরের প্রথমদিনে কমেছে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত      




যৌতুকের বলি : নববধূ মনিরার স্বপ্নের জীবন সংসার
Published : Thursday, 31 December, 2020 at 6:20 PM
মহম্মদপুর (মাগুরা) সংবাদদাতা: আঠারোতে পা দিতেই বিয়ে হয়ে যায় মনিরার। ঘটকের বানানো মিথ্যে গল্প আর ছেলে ও তার পরিবার সম্পর্কে ভীত্তিহীন তথ্য কনে পক্ষকে দুর্বল করে ফেলেছিল সেদিন। তাই ছেলে পক্ষ মেয়ে দেখতে আসার প্রথম দিনেই উভয় পক্ষের সম্মতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে পাশের গ্রামের হারুন মুন্সির ছেলের সাথে বিয়ে হয় মনিরার। ঘটকের চামচামি আর আষাঢ়ের গল্পে বিয়ের প্রথম দিনেই যৌতুক হিসেবে ছেলেকে নগদ ২০ হাজার টাকা দিতে হয় কনের বাবাকে। বিয়ের এক সপ্তাহ পার না হতেই ছেলের পিতা হারুন মুন্সি কনে পক্ষের কাছে আবার এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। কিন্তু এত টাকা যৌতুক দেবার সামর্থ মেয়ে হতদরিদ্র পিতা আরিফ মোল্যার ছিল না। তবুও তাদের আবদার ও মেয়ের সুখের জন্য শেষ সম্বল মাঠের তিন শতাংশ জমিি বিক্রি করে আবার ২০ হাজার টাকা নিজে গিয়ে ছেলের পিতার হাতে দিয়ে আসেন। সাথে ছেলের জন্য ১২ হাজার টাকা দামের সোনার আংটি। এসব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়শ; ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত।

এ বিষয় কে কেন্দ্র করে বিয়ের একমাস পার না হতেই মনিরাকে প্রচন্ড মারধর করে পাশন্ড স্বামী জিয়ারুল। এদিন চোঁখে আঘাত লেগে তার একটি চোঁখ নষ্টো হয়ে যায়। গুরুতর অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য সে পরদিন মা বাবার কাছে চলে আসে। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর তার চোঁখটি একটু ভাল হয় এক সময়। এর দুই মাস পর জিয়ারুল শ্বশুরবাড়ি এসে শ্বশুর-শাশুড়িকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে সে মনিরাকে আবার নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। কিছুদিন ভালই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু শ্বশুর, শাশুড়ি বিউটি বেগম  ও ননদ আঙ্গুর বেগম বাধসাধে সেখানে। নানা অপবাদ ও কুৎসা রটাতে থাকে মনিরাকে নিয়ে। দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে মনিরা। এরমধ্যে স্বামী জিয়ারুল কিছুদিন বাড়িতে না থাকার সুবাদে শ^শুর পূত্রবধুকে কুপ্রস্তাব দিতে শুরু করে। জিয়ারুল বাড়ি ফিরলে বিষয়টি মনিরা তাকে অবহিত করলে সংসারে আগুন দাউদাউ করে জ¦লে ওঠে। যৌতুক এবং এসব ঘটনার জেরধরে ২৫ ডিসেম্বর শুক্রবার সন্ধায় পরিকল্পিতভাবে বাড়ির সবাই মিলে মনিরাকে হত্যা করে।

বুধবার সকালে সরজমিনে মনিরার বাড়িয়ে গিয়ে দেখা যায় হৃদয় বিদারক দৃশ্য। মা নাজমা বেগম বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। আর প্রতিবেশী মহিলারা তাকে বোঝাতে চেষ্টা করছেন। কিছুক্ষণ পর একটু স্বাভাবিক হয়ে প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন। কান্নাজড়িত ভাঙ্গা কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার ম্যায়ের সব স্বপ্ন ভ্যাঙ্গে গ্যাছেরে। আমি এহন কি করবো। আমার ম্যায়েডা অনেক জ¦ালা সহ্য করে ধৈর্য্য ধরছিল সুংসার করবি বুলে। সব শ্যাষ। ৫ ভাই বোনের মধ্যে মনিরা ছিল মেজ মেয়ে। সবার মধ্যে তার চেহারা ছিল সবচেয়ে ভাল। সবাই আদর করে তাকে মনি বলে ডাকত। অবশেষে সেই মেয়েটি যৌতুকের বলি হওয়ায়
ক্ষুব্ধ প্রতিবেশীরা। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। তাই সবাই মনিরার ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রত্যাশা করে। প্রতিবেশী খাদিজা বেগম বলেন, মনিরা ছিল সভ্যশান্ত একটা মেয়ে। তাকে মেরে মাথার মগজ বের করে দেছে ওরা। আমরা ওদের সবার ফাঁসি চাই। নবাব মিয়া নামের এক বৃদ্ধ বলেন, বিয়ের তিন মাসের ভিতার এরহম ঘটনা আমি জীবনে কহনো শুনি নাই।

এ ঘটনায় ২৬ সিম্বের শনিবার দুপুরে স্বামী জিয়ারুল কে প্রধান আসামি করে মেয়ের বাবা আরিফ মোল্যা বাদী হয়ে মোট ৫জনের নামে মহম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামি জিয়ারুল ইসলাম ওইদিন ভোর রাতে বাবুখালী মধুমতির নদীর চর এলাকা থেকে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আটক করতে সক্ষম হয় থানা পুলিশ। রাতেই পুলিশের কাছে তিনি স্ত্রী হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় জিয়ারুল। মামলার অন্যান্য আসামিরা পালাতক রয়েছেন রয়েছে। মনিরা খাতুন উপজেলার বাবুখালী ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রাামের আরিফ মোল্যার মেয়ে। অভিযুক্ত জিয়ারুল একই ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের হারুন মুন্সীর ছেলে। 

পুলিশ জানায়, ৩ মাস আগে ও জিয়ারুল ও মনিরা খাতুনের পারিবারিক ভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর থেকেই শ^শুর বাড়িতে যৌতুকের দাবি করে আসছিল জিয়ারুল ও তার পরিবার। এ নিয়ে তাদের সংসারে অশান্তি ছিল নিত্যদিরে সঙ্গী। যৌতুকের বিষয় নিয়ে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদের এক পর্যায়ে লাঠি দিয়ে জিয়ারুল তার মাথায় স্বজোরে আঘাত করে। এ সময় মাথা ফেঁটে মগজ বের হয়ে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে ঘটনাস্থলেই মনিরার মৃত্যু হয়।

ইউপি চেয়ারম্যান মীর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এ ঘটনায় আসামিদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানায়। প্রয়োজনে মনিরার পরিবারের পাশ দাড়াব আমরা।

মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারক বিশ্বাস জানান, প্রধান আসামি জিয়ারুল ইসলাম কে শনিবার ভোর রাতে বাবুখালী মধুমতির নদীর চর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।







সম্পাদক ও প্রকাশক : কে.এম. বেলায়েত হোসেন
৪-ডি, মেহেরবা প্লাজা, ৩৩ তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত এবং মনিরামপুর প্রিন্টিং প্রেস ৭৬/এ নয়াপল্টন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স: ৪১০৫২২৪৫, ৪১০৫২২৪৬, ০১৭৭৫-৩৭১১৬৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন: ৪১০৫২২৫৮
ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
পিএবিএক্স: ৪১০৫২২৪৫, ৪১০৫২২৪৬, ০১৭৭৫-৩৭১১৬৭, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন: ৪১০৫২২৫৮
ই-মেইল : [email protected], [email protected], [email protected]